উইন্ডোজ ৭ এর গতি বাড়ান (স্টেপ বাই স্টেপ মেগা টিউটোরিয়াল)
আপনারা উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমটিকে কার্যকরী ভাবে আরও দ্রুততর করতে পারবেন সহজেই। কেননা, আমাদের অনেকেরই এরকম ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ রয়েছে যেগুলো উইন্ডোজ ৮ এবং এর পরের ভার্সন গুলো সাপোর্ট করেনা। সেহেতু, উইন্ডোজ ৭-ই ভরসা। আর এজন্যেই আজকের এই টিউটোরিয়ালটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। চলুন, জেনে নেই সেই উপায় গুলো যার সাহায্যে আপনার সেই চিরচেনা উইন্ডোজ ৭ কাজ করবে আগের চাইতেও দ্রুত।
Aero থিম ডিজঅ্যাবল করুন
আমরা উইন্ডোজ ৭ এর ডিফল্ট Aero থিমের সাথে প্রায় সবাই কম বেশি পরিচিত। চমৎকার ইন্টারফেসটি ব্যবহারকারীদের মন জয় করলেও এর রান করার জন্য দরকার হয় কিছুটা শক্তিশালী হার্ডওয়্যার এবং এই থিমটি রান করার সময় কম্পিউটারের বেশ খানিকটা রিসোর্স ব্যবহার করে থাকে এবং ফলে চমৎকার ইন্টারফেসের কারণে স্মুথ অপারেটিং সিস্টেম কিছুটা হলেও ল্যাগি হয়ে যায়। তাই, আপনি ইচ্ছে করলেই উইন্ডোজের এই Aero থিম ডিজঅ্যাবল করে রাখতে পারেন। এর জন্য প্রথমে ডেস্কটপের উপর মাউস কার্সর রেখে রাইট ক্লিক করুন এবং কনটেক্সট মেন্যু থেকে Windows color সিলেক্ট করুন। এবার নতুন উইন্ডো এলে Enable transparency বক্সের পাশের টিক চিহ্নটি তুলে দিন, ব্যাস! হয়ে গেল।

আপনার কম্পিউটার থেকে অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম মুছে দিন
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কারও কাছ থেকে নতুন একটি সফটওয়্যারের কথা শুনলেই সেটি কিনে বা ডাউনলোড করে কম্পিউটারে ইন্সটল করেন। কিন্তু, মনে রাখবেন আপনার ইন্সটল করা এই সকল অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার গুলো আপনার কম্পিউটারে ইন্সটলেশনের সময় সিস্টেমের স্পেস দখল করার পাশাপাশিও তৈরি করছে নানা রকম জাঙ্ক ফাইল এবং টেম্পোরারি ফাইল। তাই, যদি স্মুথ অপারেটিং সিস্টেমের স্বাদ কিছুটা হলেও উপভোগ করতে চান তবে এখনই আপনার কম্পিউটারে থাকা অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো আন-ইন্সটল করুন।
অপ্রয়োজনীয় ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট গুলো ডিজঅ্যাবল করুন
Aero থিম ইফেক্টের মতই ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট গুলো আমাদের কম্পিউটারের বেশ কিছু রিসোর্স দখল করে যার ফলে অপারেটিং সিস্টেম সামান্য পরিমাণে হলেও স্লো হয়ে যায়। এজন্যে আপনি ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট গুলো ডিজঅ্যাবল করে রাখতে পারেন। এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে,
- My computer এর উপর মাউসের রাইট ক্লিক করুন এবং ‘Propertise’ সিলেক্ট করুন।
- নতুন উইন্ডোর বাম পাশে দেখতে পাবেন ‘Advanced system settings’ নামের একটি অপশন আছে, ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর যে উইন্ডোটি আসবে তার ‘Performance’ অপশনটির নিচের Settings বাটনে ক্লিক করুন। ক্লিক করলে ‘Performance Options’ নামের একটি ছোট পপ আপ উইন্ডো ওপেন হবে।
- নতুন পপ আপ উইন্ডোটির Advance ট্যাব সিলেক্ট করলে নিচের মত একটি উইন্ডো দেখতে পাবেন।

- এবার আপনি Custom এ টিক চিহ্ন দিয়ে নিচের স্ক্রিন শটের মত সেটিংস করে Ok চেপে বের হয়ে আসুন।

- ইফেক্ট সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন হবার জন্য আপনার কম্পিউটারটি রিস্টার্ট দিয়ে নিন।
ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করুন
আপনারা সম্ভবত সবাই জেনে থাকবেন যে আমাদের কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভে জমে থাকা ফাইল সমূহের ফ্র্যাগমেন্টেশনের ফলে আমাদের কম্পিউটারের সিস্টেম স্লো হয়ে যায়, তাই এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য আপনি মাঝে মাঝেই আপনার ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করুন। এত করে আপনার সিস্টেম ফাস্টতো হবেই, পাশাপাশি আপনার হার্ড ড্রাইভের আয়ুও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট করার জন্য আপনাকে Start > Programs > Accessories > System Tools > Disk defragment লোকেশনে যেতে হবে।

ডিস্ক ক্লিন-আপ সুবিধা ব্যবহার করুন
ডিস্ক ক্লিন-আপও ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট এর মতই একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা, ডিস্ক-ক্লিন আপ সুবিধা আপনার কম্পিউটারে জমে থাকা টেম্পোরারি ফাইল সমূহ জমে থাকতে সাহায্য করে। এই সুবিধা ব্যবহারের জন্য আপনাকে Start > Programs > Accessories > System Tools > Disk cleanup লোকেশনে যেতে হবে।

এরপর আপনার যে ড্রাইভটি ক্লিন করা দরকার সেটি সিলেক্ট করে Ok চাপলেই ক্লিন-আপ প্রসেস শুরু হবে।
কম্পিউটারের স্টার্ট আপে যথা সম্ভব কম সফটওয়্যার সিলেক্ট করুন
আপনি যদি আপনার কম্পিউটারের স্টার্ট আপের সময় বেশি সফটওয়্যার সিলেক্ট করে রাখেন তবে আপনার কম্পিউটার চালু হবার সময়েই যথেষ্ট স্লো হয়ে যাবে কেননা যে কোন প্রোগ্রামই রান করার জন্য বেশ কিছু স্পেস দখল করে রাখে। তাই আপনি Run > CMD > msconfigএ গিয়ে ‘Startup’ ট্যাব সিলেক্ট করে স্টার্ট আপের সময় কোন কোন সফটওয়্যার আপনি স্টার্ট আপে সিলেক্ট করতে চান তা ম্যানেজ করতে পারবেন।

রুটিন মাফিক আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস আছে কি না তা চেক করুন
আমরা অনেকেই অজান্তেই মাঝে মাঝে ক্ষতিকর সাইটে চলে যাই যার মাধ্যমে আমাদের কম্পিউটারে জমা হয়ে নানা প্রকার ম্যালওয়্যার এবং এসব ম্যালওয়্যার নানা রকম ক্ষতি করার সাথে সাথে কম্পিউটারকেও করে তোলে বেশ ল্যাগি। এর জন্য ভালো এন্টিভাইরাস ব্যবহার করে আপনি প্রায় রুটিন মাফিক আপনার কম্পিউটারটিতে কোন প্রকার ভাইরাস আছে কি না তা চেক করতে পারেন।

তবে হ্যাঁ, মনে রাখবেন – আপনি অবশ্যই একই কম্পিউটারে একের অধিক এন্টিভাইরাস রাখবেন না। এতে করেও আপনার কম্পিউটারের সিস্টেম স্লো হয়ে যাবে।
স্ক্রিন সেভার এবং ওয়ালপেপার ব্যবহার করবেন না
হয়তো শিরোনামটা আপনার হাস্যকর লেগেছে! ভাবছেন, ‘কি বলছি এসব!!’ কিন্তু, যেহেতু আমি আজকে কথাই বলছি উইন্ডোজ ৭-কে কীভাবে কিছুটা হলেও দ্রুততর করা যায় তাই অতি ছোট্ট পয়েন্টও আপনাদের সাথে আমার শেয়ার করা উচিৎ বলে আমি মনে করি, তাই এই পয়েন্টটিও লিখলাম। স্ক্রিন সেভার মেইন মেমোরিতো (র্যাম) ব্যবহার করেই, ওয়ালপেপারও করে থাকে। তাই যদি পারেন তবে এড়িয়ে চলুন।
সার্চ ইনডেক্স ফিচার ডিজঅ্যাবল করুন
উইন্ডোজের এই সার্চ ইনডেক্স ফিচারটি মাঝে মাঝে কাজে লাগলেও তা কিছুটা হলেও র্যামের রিসোর্স দখল করে বসে থাকে। যেহেতু এই ফিচারটি এতটা ফ্রিকোয়েন্টলি কেউ ব্যবহার করেনা তাই এটা আপনি ডিজঅ্যাবল করে রাখতে পারেন। এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে:
- ‘My computer’ অথবা ‘Computer’ এর উপর মাউসের রাইট বাটন ক্লিক করে ‘Manage’ অপশনটি সিলেক্ট করুন।
- নতুন খোলা উইন্ডোর বাম পাশের নিচের দিকে একটি অপশন দেখতে পাবেন, ‘Services and Application’ নামের। সিলেক্ট করুন।
- দুটি অপশন পাবেন, Services এবং WMII control, আপনি Services সিলেক্ট করুন। নিচের মত একটি উইন্ডো দেখতে পাবেন।

এবার এই লিস্ট থেকে Windows Search খুঁজে বের করুন এবং ক্লিক করুন। নিচের স্ক্রিন শটের মত একটি উইন্ডো দেখতে পাবেন।

- এবার আপনি Starup type’ অপশনের Disabled সিলেক্ট করে Ok চেপে বের হয়ে আসুন।
ব্যাস হয়ে গেলো সার্চ ইনডেক্স ডিজঅ্যাবল্ড।
থাম্বনেইল প্রিভিউ ডিস্যাবল করুন
এর জন্য আপনাকে যা করতে হবেঃ
- computer অথবা my computer ওপেন করুন।
- উইন্ডোর উপরের দিকে একটি অপশন দেখতে পাবেন ‘Organize’, সিলেক্ট করুন।
- এবার ‘Folder and search option’ অপশনটি সিলেক্ট করুন।
- নিচের মত নতুন একটি উইন্ডো ওপেন হলে View ট্যাবটি সিলেক্ট করুন।

- এবার উপরের স্ক্রিন শটের মার্কড অংশের মত টিক চিহ্ন দিয়ে বের হয়ে আসুন, ব্যাস।
আশা করি উপরের ধাপ গুলো অনুসরণ করলে আপনারা আপনাদের চির চেনা উইন্ডোজ ৭-কে কিছুটা হলেও দ্রুততর করতে পারবেন। আজ আর লিখছিনা,আগামীতে দেখা হবে নতুন কিছু নিয়ে। ততদিন, ভালো থাকুন আপনারা সবাই।
0 comments :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন